![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা ভক্তদের সহিত শ্রীক্ষেত্রে বার্ষিক মিলন
যখন মহাপ্রভু নবদ্বীপ থেকে চলে গিয়েছিলেন, তিনি তখন নিত্যানন্দ প্রভুকে আদেশ দিয়েছিলেন, যে তিনি সমস্ত গৌড়মণ্ডলের ভক্তগণকে দেখাশোনা করবেন । তাঁর ইচ্ছা অনুসারে নিত্যানন্দ প্রভু সারা গৌড়মণ্ডলে ঘুরে ঘুরে প্রচার করতেন আর রথের সময় তিনি প্রতি বছর দল-বল নিয়ে শ্রীপুরীধামে হাঁটতে হাঁটতে আসতেন । যাত্রা সময় তাঁকে সাহায্য করে অনেক ভক্তগণকে নিয়ে শিবানন্দ সেন কুলীন গ্রাম থেকেও যেতেন । পনিহাটিতেও রাঘব পণ্ডিতের বাড়ি আছে, সেখানে তাঁর বোন দময়ন্তী সারা বছর ধরে মহাপ্রভুর জন্য বিভিন্ন ভোগ তৈরি করতেন আর রাঘব পণ্ডিত সেটা কিছু ভক্তগণের সাথে পাঠাতেন বা কিছু নিজে পুরীতে বয়ে বয়ে নিয়ে আসতেন । এই দিন পর্যন্ত রাঘব পণ্ডিতের বাড়িতে ভক্তগণ অনেক কিছু তৈরি করে (বিভিন্ন আচার, চাটনি, ইত্যাদি) আর রথের সময় পুরীতে নিয়ে আসেন । আমরা যখন শ্রীপুরীধামে যাই, তখন গাড়ি বা ট্রেন নিয়ে শীঘ্র যাই, কিন্তু ওই সময় ভক্তগণ অন্তত দুমাস ধরে হাঁটতে হাঁটতে আসতেন । এসে তাঁরা সবাই জগন্নাথের মন্দিরে যেতেন না—তাঁরা এসে সোজা গম্ভীরায় (কাশী মিশ্রের বাড়িতে) মহাপ্রভুর কাছে যেতেন, তাঁর দর্শন পাওয়ার জন্য । বৈষ্ণবগণকে দেখে মহাপ্রভু তাঁদেরকে খুব উত্তেজিত ভাবে স্বাগত জানাতেন : এইক্ষণেই তিনি বলতেন, “আরে ! থাকার জায়গা হচ্ছে ?” “ঘর পেয়েছেন ?” “উমুক-সুমুক এসব হচ্ছে ?” “হে নিত্যানন্দ ! তুমি সব ব্যবস্থা করে দাও ! প্রসাদ নিয়ে যাও !” রাজা প্রতাপরুদ্র সমস্ত ঘরের ব্যবস্থা করে দিতেন—নিত্যানন্দ প্রভু তাঁকে জিজ্ঞেস করতেন, “সবাই কি ঘর পেয়েছেন ?” তিনি বলতেন, “হ্যাঁ, আগের বছর যেখানে সমস্ত ভক্ত থাকতেন, সবাই সেখানে চলে গিয়েছিলেন ।” তাই, বর্ধমানের লোক বর্ধমানের জায়গায়, মুর্শিদাবাদের লোক মুর্শিদাবাদের জায়গায় থাকতেন, ইত্যাদি । সবাই জানতেন কোথায় তাঁদের লোক থাকবেন । ভক্তগণকে দেখে পুরীর লোক হাসতে হাসতে কিছু ঘৃণা করে বলতেন, “এই বাংলার লোক শুধু খেতে আসে !” কেন তারা এটা বলতেন ? কারণ ভক্তগণ এসে শুধু মহাপ্রভুর দার্শন পেতে উত্তেজিত ছিলেন । আর দর্শন সময় মহাপ্রভু বলতেন, “এত দূর থেকে হেঁটে তোমরা এসেছো ! হে গোবিন্দ, হে নিত্যানন্দ, এদের খেতে দাও । প্রসাদ কোথায় ?” তাই সর্বাগ্রে তিনি সবাইযের জন্য জগন্নাথের প্রসাদ ব্যবস্থা করতেন—সমুদ্রে স্নান না করে, মস্তক মুণ্ডন না করে, কিছু না করে, সবাই মহাপ্রভুর কাছে যেতেন আর উনি তাঁদেরকে খেতে দিতেন । মহাপ্রভুও বলতেন, “আরে, কী ব্যাপার ? তোমরা পুরীতে এসেছ, জগন্নাথদেব দর্শন কেন করতে যাচ্ছ না ?” তখন সমস্ত ভক্তরা বলতেন “প্রভু, তোমার দর্শন করলে আমাদের জগন্নাথ দর্শনই হয়ে যায় ।” আর মহাপ্রভু কী বলবেন ? সেই ভাবে ভক্তগণ প্রতি বছর মহাপ্রভুর কাছে আসতেন ।
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত
সূচীপত্র
সূচনা : |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |