| |||||||
|
|||||||
শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা মহাপ্রভুর পুরীতে যাত্রা : শান্তিপুর
মহাপ্রভু কালনাঘাটে পৌঁছে গেলেন—সেখানে গঙ্গায় অপর তীরে শান্তিপুর ছিল । অদ্বৈত প্রভু ওখানে নদীর মধ্যে নৌকায় বসে অপেক্ষা করছিলেন । দেখুন, এটা কি করে সম্ভব ছিল ? ওই সময় স্যাটেলাইট ছিল না, ফোন-টোন ছিল না, মোবাইল ছিল না, কোন হোয়াটস্যাপ (whatsapp) বা ফেইসবুক (facebook) ছিল না—অদ্বৈত আচার্য্য কি করে জানতে পেলেন যে, মহাপ্রভু ওখানে আসবেন ? সেইরকম ছিল তাঁর ভক্তির বল । মহাপ্রভু গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে জলে গলা পর্যন্ত ঢুকলেন আর চোখ বন্ধ করে যমুনার স্তব আবৃত্তি করলেন (নিত্যানন্দ প্রভুর প্রতারণের জন্য তিনি ভাবলেন যে, তিনি বৃন্দাবনে পৌঁছে গিয়েছিলেন) । তিনি ভাবলেন, “আমি বৃন্দাবনে পৌঁছে গেলাম । ভাল, আমি খুব খুশি ।” তখন তিনি চোখ খুলে অদ্বৈত প্রভুকে দেখলেন । অবাক হয়ে মহাপ্রভু জিজ্ঞেস করলেন, “আরে, অদ্বৈত, তুমি কি করে জানলে আমি বৃন্দাবনে ? তুমি কী করছ এখানে ?” অদ্বৈত প্রভু উত্তরে বললেন, “প্রভু, যেখানে তুমি সেখানে বৃন্দাবন—যেখানে তুমি সেখানে যমুনা !” “কী ?! কী বলছ তুমি ?!” “ঘুরে দেখ ।” “উঃ, এটা যমুনা মোটেই নয়, এটা তো গঙ্গা ! কিন্তু আমি যমুনার স্তব করেছি…” “সেটা ভুল নয়, প্রভু । এখানে এই তীরে গঙ্গা আর অপর তীরে যমুনা, তাই তুমি কোন ভুল করেছ না ।” তারপর অদ্বৈত প্রভু মহাপ্রভুকে নতুন কাপড় দিয়ে বললেন, “প্রভু, কৃপা করে এটা নিয়ে পর । কাপড় পরিবর্তন না করে তুমি তিন দিন ধরে ঘুরে বেড়িয়েছ ।” মহাপ্রভু নৌকায় উঠে গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করলেন । তারপর সবাই মিলে অদ্বৈত আচার্য্যের বাড়িতে গেলেন । অদ্বৈত প্রভুর স্ত্রী সীতা ঠাকুরাণী মহাপ্রভুর জন্য অনেক অনেক ভোগ রান্না করেছিলেন (“বত্তিশা-আঠিয়া-কলার আঙ্গটিয়া পাতে দুই ঠাঞি ভোগ বাড়াইল ভালমতে”) আর মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দ প্রভুর জন্য দুটো আসন রেখে দিলেন । যখন মহাপ্রভু ক্ষুধার্ত হন তিনি সহজে সহ্য করতে পারেন কিন্তু যখন নিত্যানন্দ প্রভু ক্ষুধার্ত হন তিনি মোটেই সহ্য করতে পারেন না । তিনি মহাপ্রভুর সঙ্গে তিন দিন ধরে কিছু না খেয়ে হেঁটে হেঁটে গিয়েছিলেন বলে শান্তিপুরে এসে তাঁর ভীষণ ক্ষুধা লেগে গেছে । তিনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন । তাই নিত্যানন্দ প্রভু অপেক্ষা করতে না পেরে আসনটার উপরে বসে খেতে লাগলেন । দেখে মহাপ্রভু অদ্বৈত প্রভুকে অপর আসনটার দিকে টেনে বললেন, “তুমি বস, তুমি বস, এটা তোমার আসন !” অদ্বৈত প্রভু অপত্তি করলেন, “না, প্রভু, সীতা রাণীকে জিজ্ঞেস কর কার এই অসানটা । ও তোমার জন্য এটা রাখল । তুমি সন্ন্যাস নেওয়ার পর তিন দিন ধরে কিছু না খেয়ে হেঁটে হেঁটে গিয়েছিলে, তাই তুমি কৃপা করে এখানে বসে খাও ।” তখন মহাপ্রভু বসে প্রসাদ নিলেন । এদিকে শচীমাতা, নবদ্বীপবাসীগণ ও মহাপ্রভুর ভক্তগণ খবর পেয়েছিলেন যে, মহাপ্রভু শান্তিপুরে পৌঁছে গিয়েছেন । সবাই শীঘ্র শান্তিপুরে গিয়ে হাজির হলেন । যে নিমাই কাটোয়ায় তাঁর গৃহস্থ পোশাক, সুবলিত চাঁচর কেশ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁর মুণ্ডিত মস্তক দেখতে পেয়ে তারা খুব দুঃখিত হয়ে পড়ল । শচীমাতাও শান্তিপুরে এলেন । খুব দুঃখ করে তিনি শ্রীবাস পণ্ডিত ও অদ্বৈত প্রভুকে বললেন, “আমি বুঝি যে, নিমাই কখনও নবদ্বীপে ফিরে আসবে না, আমি জানি ও চলে গেছে… কিন্তু আমি ওর জন্য একবার রান্না করতে পারব কি না ? যদি আমি রান্না করি, ও সেটা খাবে ? এখন ও সন্ন্যাসী, তাই আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে । আমি নিজে ওকে জিজ্ঞেস করতে পারি না, তোমরা কৃপা করে ওকে জিজ্ঞেস কর । আমি ভাবছি তিনি দূরে চলে যাবে, তোমরা সব সময় ওর জন্য রান্না করতে পারবে কিন্তু আমি কখনও পারব না । আমার একমাত্র ভরসা যে, আমি এখানে অন্তত একবার ওর জন্য কিছু রান্না করতে পারব । কৃপা করে জিজ্ঞেস কর ।” শ্রীবাস পণ্ডিত ও অদ্বৈত প্রভু মহাপ্রভুকে জিজ্ঞেস করলেন আর মহাপ্রভু রাজি হলেন । মহাপ্রভু কয়েক দিন ধরে শান্তিপুরে থাকলেন আর সারা দিনরাত ভক্তগণকে শিক্ষা দিয়ে হরিকথা বলতেন আর নেচে নেচে কীর্ত্তন করতেন । মাঝেমাঝে তিনি মুর্চ্ছা যেতেন, মাঝেমাঝে গায়ে অষ্টসাত্ত্বিকবিকার প্রকাশ করলেন—এসব শুরু করল সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর । যখন চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, তখন মায়ের অনুমতি নিয়ে নিত্যানন্দ প্রভু, মুকুন্দ দত্ত, চন্দ্রশেখর আচার্য্য ও গদাধর পণ্ডিতের সঙ্গে মহাপ্রভু শান্তিপুর ছেড়ে দিয়ে পুরী দিকে হাঁটতে শুরু করলেন ।
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত
সূচীপত্র
সূচনা : |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |