আমাদের শ্রীগুরুপরম্পরা :
শ্রীশ্রীল ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিসুন্দর গোবিন্দ দেবগোস্বামী মহারাজ শ্রীশ্রীল ভক্তিরক্ষক শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ ভগবান্ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর
              প্রভুপাদ
“শ্রীচৈতন্য-সারস্বত মঠে সূর্যাস্ত কখনই হয় না” :
আমাদের মঠের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
 
আমাদের সম্পর্কে শ্রীউপদেশ শ্রীগ্রন্থাগার শ্রীগৌড়ীয় পঞ্জিকা ছবি ENGLISH
 

শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা


শ্রীজগদানন্দ পণ্ডিতের প্রেম

 

আমরা শ্রীপুরীধাম পরিক্রমা করতে করতে জগদানন্দ পণ্ডিতের ভজনকুটিরেও যাই । তাঁর দিব্য সুন্দর গ্রন্থ হচ্ছে শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত । প্রেম বিবর্ত—প্রেম কাকে বলে ? তিনি গ্রন্থটার মধ্যে এটা আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন ।

যে আমাদের যুগে ছেলে-মেয়েরা প্রেম করে, সেটা প্রেম নয় । সেটা হচ্ছে কাম । “কাম অন্ধকার, প্রেম নির্ম্মল ভাস্কর ।” প্রেম করে, বিয়ে করে, তারপর কী হয় ? সেটা যদি প্রেম, তাহলে স্বামী তার স্ত্রীকে কি করে মেরে ঝুলিয়ে দেয় কেন ? সে কি প্রেম হয় ? আমরা প্রতি দিন খবর কাগজ পড়ি যে, প্রত্যেক দিন কত লোক স্বামী তার স্ত্রীকে খুন করে দেয় ।

বাংলায় একটা কথা আছে : “কয়লা শত ধুইলেও ময়লা যায় না ।” অর্থটা হচ্ছে যে, ভাল সঙ্গ করলে ভাল জিনিস পাবেন আর খারাপ সঙ্গ করলে খারাপ জিনিস পাবেন । সাধারণভাবে চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে কিন্তু লোহাটা যদি জং পড়ে থাকে, তাহলে চুম্বকটা তাকে ধরবে না । আমরাও সেইরকম—অবিদ্যা দ্বারা এই দেহের সব সময় চিন্তা করে আমরা মরিচা পড়ে গেছি, তাই কৃষ্ণ আমাদের আকর্ষণ করেন না । কিন্তু আমরা যদি আবার বিশুদ্ধ হয়ে যাব, তখন আমরা ভগবানের চরণে পৌঁছাতে পারব আর নির্ম্মল প্রেম কাকে বলে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারব ।

তাই আমাদের পতিত অবস্থার কথা চিন্তা করে শ্রীজগদানন্দ পণ্ডিত তাঁর শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত রচনা করেছিলেন । সেখানে তিনি প্রেম কাকে বলে বুঝিয়ে দিলেন । সেই প্রেম মহাপ্রভু এই জগতে আবির্ভূত হয়ে বিতরণ করতেন আর যে প্রীতি জগদানন্দ পণ্ডিতের ছিল, সেরকম প্রীতি কখনও দেখা না যায় ।

জগদানন্দের জন্মস্থান সিলেটের কাছে । একটু পরে তিনি যে গ্রামে থাকতেন, আজ সেই গ্রামের নাম জগদানন্দপুর, এটা আমাদের হাপানিয়া মঠের খুব কাছে । ওখানে বিরাট জমিদার বাড়ির মত বাড়ি আছে আর অনেক বছর আগে যে লোক সেখানে থাকতেন, সে শ্রীল শ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজের কাছে গিয়ে অনেক অনুরোধ করেছেন যেন, তিনি সেই স্থানের ভার গ্রহণ করবেন, কিন্তু শ্রীলশ্রীধর দেবগোস্বামী মহারাজ বললেন যে, তাঁর সেবক নেই এই জায়গায় দেখাশোনা করবার জন্য । শেষে জমিদারটি এই বাড়ি শ্রীলশ্রীধর মহারাজের গুরুভাইকে দিয়েছিলেন । সেইভাবে আজও জগদানন্দ পণ্ডিতের বাড়িতে সেবা চলছে ।

জগদানন্দ পণ্ডিত খুব অল্প বয়স (৭-৮ বয়স) থেকে মহাপ্রভুর সঙ্গে থাকতেন—মহাপ্রভু জগদানন্দ পণ্ডিতের চেয়ে বয়সে বড় হয়েও তারা উভয় এক টোলে ব্যাকরণ পড়তেন ।

যেমন বাচ্চাদের মধ্যে স্কুলে ঝগড়া হয়, তেমন মাঝে মাঝে তাঁদের মধ্যেও ঝগড়া ছিল । এক দিন যখন টোলে গিয়ে দুজনের ঝগড়া ছল তখন জগদানন্দ পণ্ডিত ক্রোধে বাড়িতে মায়ের কাছে ফিরে গেলেন না—তিনি গঙ্গার ঘাটে গিয়ে সেখানে চুপ করে বসে থাকলেন ।

একটু পরে তাঁর মা তাঁকে খোঁজে বেরিয়ে গিয়ে শচীমাতার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “শাচী মা, আমার জগা এসেছে ?”

শচী মাতা বললেন, “না তো ! ও এখানে আসে নি ।”

কিন্তু নিমাই কথাটা শুনে একবারে উঠে গেলেন, “জগা কথায় গেল ?” তিনি লণ্ঠন (কুপি, কেরোসিনের ছোট ডিবে) নিয়ে খুঁজতে বেরিয়ে গেলেন । খুঁজে খুঁজে তিনি দেখতে পেলেন যে, জগদানন্দ গঙ্গার ধারে বসে আছেন । মহাপ্রভু তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলেন আর শচী মাকে বললেন, “মা, কিছু প্রসাদ ওকে দাও ।” প্রসাদ পেয়ে তাঁরা রাত্রে এক বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লেন । আর পরের দিন আবার একসঙ্গে টোলে গেলেন—টোলে ছুটি হাওয়ার পর জগদানন্দ আবার নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন ।

যখন মহাপ্রভু নবদ্বীপ ছেড়ে শ্রীপুরীধামে গেলেন, জগদানন্দ পণ্ডিত তাঁর সঙ্গে গেলেন ।

কিরকম তাঁর ভাব ছিল ? তিনি আসলে কার অবতার ছিলেন ? সত্যভামার । দ্বারকায় গেলে দেখতে পাবেন যে, ওখানে রুক্মীনী, সত্যভামাদি ১৬ ১০৮ মহিষীগণ যে কৃষ্ণকে সেবা করেন সেটা ঐশ্বর্য্যিক সেবা হয় ; বৃন্দাবনে গোপীগণ যে রাধা-কৃষ্ণকে সেবা করেন, সেটা হচ্ছে মাধুর্য ; আর মহাপ্রভু যে লীলা করেছিলেন, সেটা হচ্ছে ঔদার্য লীলা । ঔদার্য, মাধুর্য, ঐশ্বর্য—এই তিনটা ভাব আছে ।

সেইজন্য সত্যভামা জগদানন্দ পণ্ডিত হয়ে এই কলিয়ুগে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং তিনি মহাপ্রভুর সেবা করার সুযোগ পেয়েছিলেন ।

আপনারা সবাই জানেন যে, একটা লোকের দুটো বউ থাকলে ছোট বউয়ের দাপটটা একটু বেশী হয় । স্বামী ওকে একটু বিশেষ সুবিধা বা অধিকার দেয় আর ও তখন ওর কর্তৃত্ব ফলায় । তাই না ? দ্বারকায় সত্যভামা সব সময় কর্তৃত্ব ফলাতেন আর এখানেও জগদানন্দ পণ্ডিতও কর্তৃত্ব ফলাতেন ।

এক দিন জগদানন্দ পণ্ডিত গোবিন্দকে কর্তৃত্ব ফেলায়ে বললেন, “গোবিন্দ, তুমি প্রতি দিন প্রভুর পা একটু মালিশ করে দাও । ও ২৪ ঘণ্টা নৃত্য কীর্ত্তন করছেন সন্ধ্যার সময় এসে তাঁর পায়ের ব্যথা হচ্ছে ।”

গোবিন্দ বিনীত ভাবে বললেন, “ঠিক আছে ।”

একটু পরে জগদানন্দ পণ্ডিত গোবিন্দের কাছে আবার এসে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি মালিশ করে দিচ্ছ ?”

“হ্যাঁ, দিচ্ছি, প্রভু ।”

“কী দিয়ে মালিশ করছ ? তোর তেল-টেল আছে ?”

গোবিন্দ বললেন, “প্রভু এসব কিছু চান না । জল দিলেও রেগে যান । আমি শুধু হাত দিয়েই টিপে দিই ।”

জগদানন্দ পণ্ডিত উত্তেজিত হয়ে বললেন, “না, ও সব হবে না ! আমি বঙ্গে যাচ্ছি, তেল নিয়ে আসব ।”

গোবিন্দ কিছু বললেন না—জগদানন্দ পণ্ডিত যা খুশি তাই করবেন, তাঁকে কিছু বলে কাজ নেই ।

জগদানন্দ পণ্ডিত বঙ্গে গিয়ে নিজের হাতে দারুন সুগন্ধি তেল তৈরি করেছিলেন আর পুরীতে ফিরে এসে তেলটা গোবিন্দকে দিয়ে বললেন, “শুন, গোবিন্দ, আজ থেকে প্রভুর পায়ে এই তেল মাখিয়ে দিবি ।”

সন্ধ্যার সময় মহাপ্রভু ঘরে ঢুকে গোবিন্দকে জিজ্ঞেস করলেন, “আরে, ঘরে একটা সুগন্ধির মত গন্ধ এসছে ! এটা কিসের ?”

গোবিন্দ ভয় ভয়ে বললেন, “প্রভু, জগদানন্দ প্রভু একটি সুগন্ধি তেল নিয়ে এসেছে । আমাকে বলছে শুধু হাতে মালিশ করা চলবে না, তাই এই তেলটা দিয়ে বলল যেন আপনার পায়ে মাখিয়ে দেই ।”

এ কথা শুনে মহাপ্রভু রেগে গেলেন, “ও কী ভাবছে ? আমি কী দারী সন্যাসী হব ? আমি তেল মেখে আর যখন রাস্তা ধরে হাঁটব, লোক আমার গা থেকে গন্ধটা পেয়ে বলবে যে, এর ঘরে বউও আছে ! এ দারী সন্যাসী হল ।”

কথাটা শুনে গোবিন্দ কাঁপতে শুরু করলেন । আর মহাপ্রভু অত রেগে গিয়ে দ্বাপর-যুগের সম্পর্কের কথা বলে ফেললেন, “জগাই বোধহয় আমাকে নিয়ে আবার পুনরায় সংসার করার ইচ্ছা হয়েছে !” (দ্বাপর-যুগে সত্যভামা কৃষ্ণের স্ত্রী ছিলেন আর তাঁকে অনেক কিছু দিয়ে সেবা করতেন—আর কলি-যুগে কৃষ্ণ হয়ে গেলেন গৌরাঙ্গ আর সত্যভামা হয়ে গেলেন জগদানন্দ ।)

পরের দিন জগদানন্দ পণ্ডিত গম্ভীরায় এসে গোবিন্দকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি প্রভুকে তেল মাখিয়েছ ?”

গোবিন্দ কী বলবেন ? তিনি খুলে বললেন, “আমি চেষ্টা করলাম কিন্তু প্রভু অত রেগে গেলেন” আর যে মহাপ্রভু বললেন, সে সব কথা তিনি জগদানন্দকে বলে দিলেন । শুনে জগদানন্দের একবারে মাথা খারাপ হয়ে গেল, তিনি বললেন, “এত বড় কথা ?!”

তখন মহাপ্রভু এসে বললেন, “শুন, তুমি তেলটা সরিয়ে দাও । জগন্নাথদেবের মন্দিরে দিলে তোমার কিছু মঙ্গল হবে, তাই ভালো, তুমি তো অনেক পরিশ্রম করে এটা নিয়ে এসেছ—তেলটা মন্দিরে দিলে তোমার পরিশ্রম বৃথা যাবে না ।”

তখন কিছু না বলে, জগদানন্দ পণ্ডিত তেলটা ঘরের মধ্যে ছুড়িয়ে ভেঙ্গে দিলেন—একবার রেগে টং হয়ে তিনি নিজের ঘরের মধ্যে হেঁটে হেঁটে গেলেন আর দরজা বন্ধ করে ওখানে বসে থাকলেন । এক দিন নয়, দুদিন নয়, তিন দিন না খেয়ে তিনি ঘরের মধ্যে দরজা না খুলে বসে থাকলেন ।

মহাপ্রভু গোবিন্দকে প্রতি দিন জিজ্ঞেস করলেন, “খবর-টবর নিয়েছ ? জগদানন্দ এসেছিল ? দরজা খুলেছিল ? তুমি আবার গিয়ে দেখ ।”

বার বার গোবিন্দ ফিরে এসে বললেন, “না, প্রভু । দরজা এখনও বন্ধ আছে । ও খুলছে না । প্রসাদও পায় নি ।”

মহাপ্রভু তো অন্তর্যামী, তিনি সব জানেন । যখন তিনদিন কেটে গিয়েছিল তখন তিনি নিজে জগদানন্দ পণ্ডিতের বাড়িতে গিয়ে দরজা খটখট করে বললেন, “জগা ! ভাই, আমি এসেছি ! তুমি তো দরজা বন্ধ করে তিন দিন এখানে না খেয়ে বসে আছ, আমিও না খেয়ে আছি ।”

দেখুন কি ফাঁকি ব্যবসা ! মহাপ্রভু তো প্রতি দিন জগন্নাথদেবের প্রসাদ খেতেন আর তাঁর ভক্তের জন্য কিরকম মিথ্যা কথা বলেছিলেন ! তিনি বললেন, “তুমি একটু দরজাটা খোল না ! তোমার হাতে রান্না না খেলে আমার পেট কোন দিনেই ভরবে না । আমিও না খেয়ে থাকব !”

মহাপ্রভুর কথা শুনে জগদানন্দ পণ্ডিতের কি করে দরজা বন্ধ রাখতে পারেন ? তখন তিনি দরজা খুলে দিয়ে মহাপ্রভুকে প্রণাম করলেন আর চুপচাপ, কোন কথা না বলে, এবার রান্নাঘরে ঢুকে গেলেন । মহাপ্রভুও কিছু বললেন না, তিনি দেখতে চাইছিলেন, কী তিনি করবেন । সঙ্গে সঙ্গে জগদানন্দ পণ্ডিত কিছু রান্না করে তাড়াতাড়ি ভোগ-টোগ লাগিয়ে দিলেন আর একটা আসন ও থালা মহাপ্রভুর জন্য রেখে দিয়ে বললেন, “বস, প্রসাদ পেয়ে নাও ।”

মহাপ্রভু তো প্রসাদ পাওয়ার জন্য এসেছিলেন না—তিনি জগদানন্দ পণ্ডিতের রাগ ভাঙ্গাবার জন্য এসেছিলেন, তাই তিনি বললেন, “না, আমরা একসঙ্গে প্রসাদ পাব ।”

জগদানন্দ পণ্ডিত বললেন, “না, না, না । তোমার কষ্ট হচ্ছিল, তুমি আগে নাও, আমি পরে খাব । আমার এক থালা শুধু আছে ।”

“বোধহয় আমি যাব আর তুমি আবার দরজা বন্ধ করে না খেয়ে থাকবে ?”

“না প্রভু, বিশ্বাস কর । আমি তোমার জন্য রান্না করে দিয়েছি । তুমি প্রসাদ পাও, আমি পরে পাব ।”

“ঠিক তো ? সত্য তো বলছ ?”

“সত্য, সত্য, সত্য । এখন প্রসাদ পাও ।”

শেষে মহাপ্রভু রাজি হয়ে গেলেন আর প্রসাদ নেওয়ার পর বললেন, “বাঃ, তোমার ক্রোধের রান্না বড় মিষ্টি ! যাই হোক, আমি প্রসাদ পেয়েছি, আবার আসছি । কিন্তু তুমি প্রসাদ পেয়ে নাও !”

“ঠিক আছে, তোমার কোন চিন্তা নেই । গিয়ে বিশ্রাম নাও, আমি প্রসাদ পেয়ে নেব ।”

মহাপ্রভু বিশ্রাম নিতে গেলেন তবু তাঁর মনটা খটখট করছে, “ও প্রসাদ পেল কি পেল না ?” তিনি গোবিন্দকে ডেকে বললেন, “গোবিন্দ, জগদানন্দ পণ্ডিতের বাড়ি যাও, দেখ ও প্রসাদ পাচ্ছে কি না ।”

গোবিন্দ জগদানন্দ পণ্ডিতের বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে দেখতে পেলেন যে, জগদানন্দ পণ্ডিত বসে আছেন আর প্রসাদ পাচ্ছেন । কিন্তু হঠাৎ করে জগদানন্দ পণ্ডিত তাঁকে দেখে গেলেন, “ওঃ ! তুমি এখানে অসময় এসেছ ? কোন কিছু বলবে ? তুমি বুঝি এসেছ দেখবার জন্য, আমি প্রসাদ পাচ্ছি কি পাচ্ছি না, তাই না ? তোমাকে প্রভু পাঠিয়ে দিল ?”

এই ভাবে মহাপ্রভু জগদানন্দ পণ্ডিতের মান ভেঙ্গে গিয়েছিলেন । তাঁর আরও অনেক লীলা হয়েছিল—তিনি সারা জীবন মহাপ্রভুর কাছে থেকে সেবা করতেন ।

জগদানন্দ পণ্ডিত জানতেন মাহাপ্রভু কে (স্বয়ং কৃষ্ণ) । দ্বারকায় তিনি মযুর পাখা, চামর, বালিশ দিয়ে কৃষ্ণকে সেবা করতেন আর আজ প্রভু কোথায় শুয়ে আছেন ? মাটিতে ।

সন্ন্যাসী হয়ে মহাপ্রভু শুকনো কলাগাছের খোলা মাটিতে রেখে শয়ন করতেন । জগদানন্দ এটা সহ্য করতে না পেরে কী করলেন ? তিনি ভাল সূক্ষ্ম বস্ত্র পেয়েছিলেন আর তাতে শিমুল তুলা দিয়ে ভরে দিয়ে একটা লেপ ও বালিশ তৈরি করেছিলেন । গোবিন্দের কাছে গিয়ে তিনি বললেন, “গোবিন্দ, এটা নিয়ে প্রভুর জন্য লাগিয়ে দাও ।”

গোবিন্দ লেপ ও বালিশটা নিয়েছিলেন কিন্তু যখন মহাপ্রভু এটা ঘরে দেখতে পেলেন, তিনি তখন রেগে গেলেন আর স্বীকার করলেন না, “যাও, একটা খাটও নিয়ে এস ! আমি সন্ন্যাসী মানুষ, আমার মাটিতে শোয়া উচিৎ ।” প্রভুর কথা শুনে জগদানন্দ পণ্ডিত দুঃখিত হয়ে পড়লেন আর স্বরূপ দামোদরকে নালিশ করলেন । তখন স্বরূপ দামোদরের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল—তিনি কলা পাতা শুকিয়ে ছিন্ন ছিন্ন করলেন আর নিজ উত্তরীয় কাপড় থেকে একটা বালিশ ও একটা লেপ বানিয়ে দিয়ে তার মধ্যে কলা পাতাটা রেখে দিয়েছিলেন  । তারপর মহাপ্রভুর কাছে গিয়ে বললেন, “নাও । এই কলা পাতাই নাও তো ।” মহাপ্রভু আর কিছু বলতে পারলেন না ।

এই রকম ছিল তাঁর সেবা-প্রবৃত্তি ! এই রকম ছিল জগদানন্দ পণ্ডিতের প্রীতি ।

 


 

← শ্রীগোপাল গুরুর কথা শ্রীলসনাতন গোস্বামীর সঙ্গ →

 

অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্­গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত


ডাউনলোড


 

সূচীপত্র

সূচনা :
শ্রীজগন্নাথদেব
মহাপ্রভুর ইচ্ছা ও পুরীতে যাত্রার আরম্ভ
মহাপ্রভুর পুরীতে যাত্রা :
শান্তিপুর
রেমুণা
সাক্ষীগোপাল
ভুবনেশ্বর
ভুবনেশ্বর শ্রীলিঙ্গরাজ
আঠারনালা
শ্রীপুরীধামে :
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের সথে মিলন
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের শিক্ষা
কাশী মিশ্রের কথা
রামানন্দ রায়ের পুনর্মিলন ও প্রকৃতি
ভক্তদের সহিত শ্রীক্ষেত্রে বার্ষিক মিলন
রাজা প্রতাপরুদ্রের প্রতি কৃপা
গোবিন্দ প্রভুর শিক্ষা
দর্শনের আর্ত্তি
শ্রীআলালনাথের কথা
কালিদাসের ব্যতিক্রম
সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের প্রসাদে রুচি
“ষাঠী বিধবা হয়ে যাক !”
গঙ্গা মাতা গোস্বামিণী
শ্রীগোপাল গুরুর কথা
শ্রীজগদানন্দ পণ্ডিতের প্রেম
শ্রীলসনাতন গোস্বামীর সঙ্গ
রামচন্দ্র পুরীর কথা
শ্রীপরমানন্দ পুরীর ভক্তিকূপ
দামোদর পণ্ডিতের বিদায়
ছোট হরিদাসের শাস্তি
গুণ্ডিচা-মার্জ্জন লীলা
শ্রীনারায়ণ ছাতায়
চটকপর্ব্বতের কথা
গম্ভীরা—বিরহের জ্বলন্ত ঘর
শ্রীল হরিদাসঠাকুর : নামাচার্য্য শিরোমণি
শ্রীগদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া
শ্রীরঘুনাথদাস গোস্বামীর শ্রীপুরীধামে আগমন ও ভজন
পরিশেষ

বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥