![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা গঙ্গা মাতা গোস্বামিণী
আপনারা সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের বাড়িতে গেলে দেখতে পাবেন যে তাঁর বাড়িতে বিগ্রহ আছে । এ বিগ্রহের কে সেবা করতেন ? গঙ্গা মাতা গোস্বামিণী । তাঁর পূর্ব্বনাম ছিল শচীদেবী (মহাপ্রভুর যে মাতা সে তা নয়) । তিনি পর এখানে এসে বিখ্যাত গুরু হয়ে গিয়েছিলেন আর ভাল হরিকথা বলতেন, অনেক লোক আসতেন তাঁর কাছ থেকে হরিকথা শোনাবার জন্য । আর তিনি জগন্নাথের বিশেষ কৃপা লাভ করেছিলেন । শচীদেবী রাজকন্যা হয়ে রাজশাহীতে (বর্ত্তমান পূর্ব্বপাকিস্তানে) জন্ম গ্রহণ করেছিলেন । যখন তাঁর বয়স হয়ে গেছে, তাঁর মা-বাবা তাঁকে বিয়ে দিতে চাইলেন কিন্তু তিনি দিব্য সুন্দরী রাজকন্যা হয়েও বললেন, “আমি শ্রীকৃষ্ণের চরণে মনটা দিয়ে দিয়েছি । আমি কোন মর্ত্ত পুরুষকে বিয়ে করব না যে আমাকে ভোগ করবে, যে আমাকে ব্যবহার করবে! আমি সে সব চাই না ।” বাবা-মাকে মিনতি করতে করতে তিনি সফল হয়েছিলেন—তাঁরা তাকে বিয়ে দিলেন না । যখন শচীদেবীর বাবা-মা পরলোক গমন করলেন, তখন দেরি না করে তিনি তীর্থ-ভ্রমণ করতে চলে গিয়েছিলেন । বৃন্দাবনে গিয়ে তিনি সেখানে এক গুরুর কাছে গেলেন । এসে বললেন, “প্রভু, আমাকে দীক্ষা দেবেন ?” “এত সুন্দরী দেখতে মেয়ে, অবিবাহিত রাজকন্যা—তুমি কি নিয়মকাননটা মানতে পারবে ?” “হ্যাঁ, পারব ।” “তুমি প্রথম এখানে থাক আর সব নিয়মকানন অনুসারে অভ্যাস কর । আমি এক বছর পরে দেখব । তুমি যদি ভিক্ষা করে জীবনযাপন করতে পারবে, তাহলে আমি তোমাকে দীক্ষা দেব ।” সেইভাবে শচীদেবী বৃন্দাবনে থাকলেন আর অত্যন্ত বৈরাগ্য অভ্যাস করতে লাগলেন—এক দিন খেয়ে এক দিন না খেয়ে থাকে তাঁর সব সৌন্দর্য, যার প্রতি লোক লোভ করতে পারত, শুকিয়ে গেল । এক বছর হয়ে যাওয়ার পর তিনি আবার সেই গুরুর কাছে গিয়ে বললেন, “প্রভু, আমাকে দীক্ষা দেবেন ?” তাঁর চেহারার এমন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল, যে গুরু তাঁকে প্রথমে চিনতেই পারলেন না । তিনি তাঁকে এইবার দীক্ষা দিতে রাজি হলেন আর দীক্ষা দেওয়ার পর তাঁকে শ্রীপুরীধামে সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন । সেখানে গিয়ে তিনি মাধুকরী ভিক্ষা দ্বারা একটি শালগ্রাম শিলার সেবা-পূজা করতে লাগলেন আর অন্য সময় ভাগবত পাঠ করতে আরম্ভ করলেন । তাঁর পাঠ এত ভাল ছিল যে এমনকি উড়িষ্যার রাজা তাঁর কাছে গিয়ে হরিকথা শুনতে লাগলেন । তবে শচীদেবীর নাম গঙ্গামাতা হয়েছিল কেন ? মাঝেমাঝে পুরীর লোক গঙ্গায় স্নান করতে গমন করতেন । কিন্তু তিনি তাঁর সেবা করতে করতে সন্তুষ্ট ছিলেন আর কোন পুণ্যকর্ম্মের দরকার ছিল না । কিন্তু এক রাত্রে জগন্নাথদেব নিজে তাঁর কাছে স্বপ্নে এসে বললেন, “শচী, তোর যদি কোন সময় গঙ্গায় স্নান করতে ইচ্ছা হয়, তাহলে বাড়ির সামনে শ্বেতগঙ্গায় স্নান করলে তুমি গঙ্গায় স্নানের ফল পাবে ।” উঠে তিনি জগন্নাথদের কথা অনুসারে লুকিয়ে লুকিয়ে শ্বেতগঙ্গায় গিয়ে ডুব দিলেন । হঠাৎ করে ভীষণ স্রোত এসে তাঁকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল । কিছুক্ষণ পরে তিনি দেখলেন যে, তিনি জগন্নাথ মন্দিরের মধ্যে অবস্থিত ছিল আর তাঁর আশে পাশে অনেক লোকজন গঙ্গায় স্নান করছেন আর লোকের স্নানের ফলে মন্দিরে ভিতরে অনেক গোলমাল হচ্ছিল । সেটা রাতে অনেক সময় হয়ে গেছে । একটু আগে যখন মন্দির বন্ধ করার সময় হয়েছিল, তখন গেট রক্ষকটি মন্দিরে তালা লাগিয়ে দিলেন (জগন্নাথের মন্দিরে অনেক বড় বড় তালা আছে—৪০ কেজি, ৫০ কেজি, ৬০ কেজি তালা আছে, এমনকি ১ কুইন্টালের ভাণ্ডারের তালা আছে) । তাই তালা লাগিয়ে সবাই মন্দির থেকে বেরিয়ে এলেন আর একজন মন্দিরেের বাহিরে থাকলেন পাহারা দেওয়ার জন্য । হঠাৎ করে গভীর রাতে তিনি শুনতে পেলেন যে, মন্দিরের মধ্যে জলের আত্তয়াজ কলকল করছে ! অবাক হয়ে পাহারাদার পূজারীর কাছে ছুটে ডাক দিলেন, “আরে আসুন ! আপনি মন্দিরটা খুলুন তো ! ভিতরে কিছু হচ্ছে ! এত ভীষণ গোলমাল ওখানে !” তাঁরা মন্দির খুলে দিয়ে ভিতরে গিয়ে গঙ্গা স্নান করা কিছু এ সব দেখতে পেলেন না—তারা শুধু মাত্র দেখলেন যে, মন্দিরের মধ্যে একটি ফুটফুটে মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল । সবাই তাঁকে আক্রমণ করলেন, “দেখ, এ ঠাকুরের সোনার অলঙ্কার চুরি করতে এসেছে ! একে বন্দি করে দাও !” মেয়েটিকে হাজত করে দিয়ে সবাই আবার নিজে নিজে ঘরে ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়লেন । ওই সময় রাজাও ঘুমিয়ে ছিলেন কিন্তু জগন্নাথদেব তাঁর কাছে স্বপ্নে হাজির হয়ে বললেন, “হে রাজা, উঠ । তোমার আদেশে আমার ভক্ত শচী মাতাকে বন্দি করা হয়েছে ! তুমি তার চরণে অপরাধ করেছ । তোমায় তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে । তার কাছে যাও, তাকে হাতির পিঠে রথে বসে দিয়ে চড়িয়ে ফিরে নিয়ে এস ! সসম্মানে যদি ফিরে আনতে না পার, তাহলে কাল থেকে কিছু ভোগ রান্না করতে হবে না—আমি খাব না !” ভয় পেয়ে রাজা উঠে গিয়ে ভাবলেন, “এটা কী ?! আমি কী এখন দেখলাম ?!” তখন তিনি শীঘ্র করে গঙ্গ মাতা গোস্বামিণীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন আর তাঁকে হাতির পিঠে রথের মধ্যে চড়িয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে সসম্মানে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । তারপর জগন্নাথদেবের ভোগ লাগানো হল । ওইসময় থেকে শ্রীশচীদেবীর নাম হয়েছিল শ্রীগঙ্গামাতা গোস্বামিণী । তিনি এত বড় গুরু হয়েছিল যে এমনকি স্বয়ং রাজা নিজে তাঁর কাছে এসে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন । তাই আপনারা বুঝতে পারছেন ভক্তের মহিমা কাকে বলে ।
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত
সূচীপত্র
সূচনা : |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |