![]() |
|||||||
| |||||||
|
|||||||
শ্রীপুরীধাম মাহাত্ম্য-মুক্তা-মালা কালিদাসের ব্যতিক্রম
মহাপ্রভু শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে কেউ তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবেন না কিন্তু শুধু একমাত্র ভক্তের সম্বন্ধে তিনি বললেন, “ওকে বারণ কর না !” কারণটা কী ? সে ভক্তের নাম কালিদাস, তিনি রঘুনাথদাস গোস্বামী কাকা ছিলেন । এক দিন তিনি আম ফল নিয়ে ঝড়ু ঠাকুরের বাড়ি এসে ছিলেন । এসে তিনি ঝড়ু ঠাকুর ও তাঁর স্ত্রীকে প্রণাম করে কিছু কথা বললেন আর ঝড়ু ঠাকুর তাঁকে বললেন, “প্রভু, তুমি তো ব্রাহ্মণ আর আমি নিচু জাতি, চামড়া বিক্রি করে খাই । তুমি আমার বাড়িতে এসেছ, তোমাকে প্রসাদ দিতে হবে কিন্তু আমি মুচি, তোমাকে প্রসাদ দিতে পারব না, আমার অপরাধ হবে । যদি কিছু মনে না করে, তাহলে কাছাকাছি একজন ব্রাহ্মণ আছে, আমি তাঁকে প্রসাদ দিতে অনুরোধ করব ।” কালিদাস বললেন, “কোন অসুবিধা নেই । আমি তোমাদের দর্শন পেতে এসেছি । আপনাদের দেখে আমি পবিত্র হয়ে গেছি । আমি এই আম নিয়ে এসেছি, তাই তোমরা আমটা পরে ঠাকুরকে ভোগ লাগিয়ে দিয়ে প্রসাদ পাবে । আমি আসছি, চিন্তা কর না ।” আমটা রেখে দিয়ে আর বিদায় নিয়ে তিনি রাস্তা ধরে কিছু দূর গিয়ে ঝড়ু ঠাকুরের বাড়ির পিছনে জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে পড়লেন । ঝড়ু ঠাকুর কিছু টের করলেন না, আর একটু পরে তাঁর স্ত্রী আমটা ঠাকুরকে ভোগ লাগিয়ে দিলেন । ভোগ দেওয়ার পর তিনি ও তার স্ত্রী প্রসাদ নিয়েছিলেন । আমটা খেয়ে স্ত্রী আমের আঁঠি চুষে চুষে খেয়ে জঙ্গলের দিকে ফেলে দিলেন আর বাড়ির মধ্যে ঢুকলেন । এটা দেখে কালিদাস বেরিয়ে গিয়ে আঁটিটা খুঁজে পেয়ে নিজে চুষতে শুরু করলেন । সেই ভাবে তিনি তাঁদের প্রসাদ যে-কোনভাবে পেয়েছিলেন । তিনি সেইভাবে সমস্ত বৈষ্ণবগণের প্রসাদ নিতেন । বৈষ্ণবের কাছে গিয়ে তিনি তাঁর উচ্ছিষ্টের ভিক্ষা করতেন আর কিছু না পেলে তিনি লুকিয়ে থাকতেন আর পরে তাঁদের ফেলা পাতা চেতে খেতেন । মাঝেমাঝে যখন কোথাও বৈষ্ণন-সেবা হত, তিনি সেখানে গেলেন কিন্তু বৈষ্ণবগণের সঙ্গে বসতেন না—যখন সমস্ত বৈষ্ণবগণ প্রসাদ ভক্ষণ করতেন, তখন তাঁরা পাত্র এক জায়গায় ফেলে দিতেন আর কালিদাস সেখানে গিয়ে সব পাত্র নিয়ে বাকি প্রসাদটা চেটে পুটে খেতেন । যখন এই কালিদাস পুরীতে এসেছিলেন, তিনি মহাপ্রভুর কাছে গেলেন । সবাই জানতেন যে, কেউ মহাপ্রভুর পায়ে হাত দিতে পারবেন না, সেটা নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু কালিদাস তাঁর কাছে গিয়ে প্রণাম করলেন আর যখন গোবিন্দ মহাপ্রভুর পা ধুতে শুরু করলেন তিনি পায়ে হাত দিয়ে জলটা খেয়ে নিলেন । সবাই তাঁকে জোর করে থামাতে গিয়েছিলেন কিন্তু মহাপ্রভু বললেন, “থাক । ওকে বারণ কর না ।” তিনি জানলেন কি রকম তাঁর বৈষ্ণবের প্রতি ভক্তি ছিল আর তার ফলে তিনি তাঁকে বারণ করলেন না । সেই রকম প্রীতি, সেই রকম বৈষ্ণবের প্রতি, ভক্তদের প্রসাদের প্রতি ভক্তি আসতে হয় ।
|
অনন্তশ্রীবিভূষিত ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুলচূড়ামণি বিশ্ববরেণ্য জগদ্গুরু শ্রীশ্রীমদ্ভক্তিনির্ম্মল আচার্য্য মহারাজের পদ্মমুখের হরিকথামৃত
সূচীপত্র
সূচনা : |
||||||
বৃক্ষসম ক্ষমাগুণ করবি সাধন । প্রতিহিংসা ত্যজি আন্যে করবি পালন ॥ জীবন-নির্ব্বাহে আনে উদ্বেগ না দিবে । পর-উপকারে নিজ-সুখ পাসরিবে ॥ | |||||||
© Sri Chaitanya Saraswat Math, Nabadwip, West Bengal, India. For any enquiries please visit our contact page. |